নূহ (আঃ) এর জীবনী এবং অবিশ্বাসীদের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঘটনা ।। শ্রেষ্ঠ মানুষ ৫ম পর্ব ।।

একজন সন্তান যখন কোন ভুল কাজ করে তার বাবা-মা হয়তো তাকে শাসন করে ।ধৈর্যশীল বাবা-মায়েরা হয়তো বুঝিয়ে বলেন একবার দুইবার হয়তো বারবার বুঝান । কিন্তু কেউ যদি বুঝেও না বুঝে বারবার ভুল পথে ফিরে যেতে থাকে হয়তো তাদের বাবা-মা তাদের ভালোর জন্য আরো কঠিন ভাবে বুঝিয়ে বলেন। এক পর্যায়ে বকাঝকাও করবেন , সেই সন্তান তার পরেও সেই ভুল পথ থেকে ফিরে আসছে না । মাসের পর মাস পার হতে লাগল বছরের পর বছর পার হয়ে গেল তার অন্যায় বেরই চলতে লাগলো । একপর্যায়ে তার বাবা-মা হয়তো হাল ছেড়ে দেবেন তারা ধরে নেবেন এই সন্তানটি বখে গেছেন । তীব্র হতাশা নিয়ে হয়তো তারা তার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিবেন । এবার ভেবে দেখুন এমন একজন বাবা যার সন্তান বারবার ভুল কাজ করার সত্ত্বেও সে তাকে বছরের-পর-বছর বুঝাতে থাকেন । দশ বছর পার হয়ে যায় 20 বছর পেরিয়ে যায় তিনি হাল ছেড়ে দেন না । সারাটা জীবন পার হয়ে যায় তিনি তাকে বুঝাতে থাকেন বুঝাতে থাকেন বিভিন্ন পদ্ধতিতে বুঝাতে থাকেন। এক ভাবে কাজ না হলে তিনি চেষ্টা করেন অন্য ভাবে সেই সন্তানকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা যায় কিনা ।
নূহ (আঃ) এর সাথে তার উম্মতের সম্পর্কটি ছিল ঠিক এরকম । তবে তিনি তাদের ২০-৩০ বছর ধরে সঠিক পথে আনার চেষ্টা করেননি । তিনি তাদের সাড়ে ৯০০ বছর সঠিক পথে আনার জন্য নিরলসভাবে চেষ্টা করে গেছেন । আদম (আঃ) ও নূহ (আঃ) এর মধ্যে দশটি প্রজন্ম ছিল । বোখারির এই হাদীসে কারুন শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে যার অর্থ হতে পারে প্রজন্ম অথবা শতাব্দি। অর্থাৎ নূহ (আঃ) আদম (আঃ) এর ১০ প্রজন্ম পর জন্মগ্রহণ করেছিলেন অথবা ১ হাজার বছর পর জন্মগ্রহণ করেছিলেন । নূহ (আঃ) এর সমাজে শিরিক ছড়িয়ে পড়েছিল গভীরভাবে । ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারি প্রাচীন সেই যুগে কিছু বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন কোন কোন ওলামাদের মতে তারা ছিলেন শীথ (আঃ) এর বংশধর যারা সমাজে ভালো কাজ করতেন । তারা মৃত্যুবরণ করার পর শয়তান এসে মানুষকে খারাপ বুদ্ধি দিতে থাকে । সে বলে এমন সম্মানিত ব্যক্তিদের যদি তোমরা মনে না রাখো তাহলে তোমাদের পরের প্রজন্ম তাদের ব্যাপারে জানবে কিভাবে । অতএব তোমাদের উচিত হবে তাদের মূর্তি তৈরি করা উপাসনা করার উদ্দেশ্যে নয় শুধু তাদের ভালো কাজ গুলো স্মরণ রাখার উদ্দেশ্যে । কিন্তু তারপর পরের প্রজন্মকে শয়তান গিয়ে বলতে লাগল তোমাদের পূর্বপুরুষেরা এই মূর্তিগুলো কে এই পুজো করেছে অর্থাৎ তোমরা যদি এই মূর্তিগুলো কে পূজা না করো তাহলে তোমাদের উপর আল্লার গজব আসবে । নূহ (আঃ) এর সময় এই মূর্তি পূজা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল তিনি যখন এক আল্লাহর ইবাদতের বাণী প্রচার করেছিলেন । সমাজের নেতারা বলল ‘’ তোমাদের দেব-দেবীদের কোন অবস্থাতেই ছাড়বে না। সমাজের পূর্ণবান ব্যক্তি গুলোর মূর্তিদের কোনোভাবেই পরিত্যাগ করবে না ‘’ ।
এই কঠোর শিরকি সমাজে আল্লাহ তাআলা নূহ (আঃ) কে পাঠালেন সত্যের বাণী প্রচার করার জন্য । তিনি ছিলেন সেই সমাজের একমাত্র বুদ্ধিজীবী শিরিকের এই ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছিলেন । এবং তিনি মানুষকে বিভিন্নভাবে বোঝাতে চেষ্টা করলেন ‘’ হে আমাদের আমি তোমাদের জন্য এক সতর্ককারী আমি তো দূর দেশে কোন আগন্তুক নই । আমি তোমাদেরই মাঝে জন্ম নিয়েছি তোমরা সবাই আমার ঘনিষ্ঠ ব্যক্ত । তোমরা আমার সতর্কবাণী শোনো, তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাকে ভয় করো এবং আমাকে অনুসরণ করো’’ । অর্থাৎ আল্লাহ যখন তোমাদের রাসূল হিসাবে আমাকে বেছে নিয়েছেন তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং আল্লাহর ইবাদত কিভাবে করতে হবে সেই জন্য আমাকে অনুসরণ করো ।
আমরা লক্ষ্য করে দেখব গোটা মানব সমাজে মানুষের একজন স্রষ্টাকে ইবাদত করার জন্য কোন সমস্যা ছিল না । বেশিরভাগ সমস্যা ছিল এই যে তাদেরই মতো একজন মানুষ যে কিনা তাদের সমাজে জন্মগ্রহণ করেছে তাকে রসুল হিসেবে মেনে নেওয়া । শেষ নবী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগেও জাহিলি আরবদের মাঝে এই সমস্যাটি ছিল প্রবল তাদের আল্লাহর ইবাদত করা নিয়ে আপত্তি ছিল না । কিন্তু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রসূল হিসেবে মেনে নিতেই তাদের যত সমস্যা ছিল । কিন্তু বাস্তবে আল্লাহর ইবাদত কিভাবে করতে হবে তা কি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ জানেন । তিনি একজন মানুষকে বাছাই করে নেন তাঁর বাণী প্রচার করার জন্য । এবং মানুষকে হুকুম করেন সেই ব্যক্তি কে অনুসরণ করার জন্য। তখন সেই ব্যক্তি কে রাসূল হিসাবে মেনে নেওয়া ছাড়া কি আল্লাহর এবাদত করার কোন উপায় থাকতে পারে। নূহ (আঃ) এর লোকেরা তাকে প্রত্যাখ্যান করল । তার সাথে তারা কেমন আচরণ করত তা সূরা নুহ এ উল্লেখ করা হয়েছে । শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নূহ (আঃ) ফোনটা দের কাছে তাওহীদের বাণী প্রচার করে এসেছেন এবং তারা তার কথায় কান দিচ্ছিল না ।
নূহ (আঃ) আল্লাহর কাছে আক্ষেপ করে বলেন ‘’ আমার রব আমি তাদেরকে দিনেরাতে আপনার দ্বীনের পথে ডেকেছি । কিন্তু আমি তাদেরকে যত দেখেছি তারা আমার থেকে তত বেশি পালিয়ে বেরিয়েছে । এবং যখনি আমি তাদের সাথে কথা বলতে গিয়েছি যাতে তারা আপনার ক্ষমা লাভ করতে পারে । তখন তারা তাদের কানের ভিতর আঙ্গুল দিয়ে রেখেছে। ‘’
আমরা কারো সাথে কথা বলার সময় যদি সে আমাদের দিকে না তাকায় যদি সে বিরক্ত হয়ে যায় এতে আমরা কতটা ক্ষুব্দ হয়ে যাব । সেই জায়গায় যদি আমরা কারো সাথে কথা বলতে চাই সে যদি তার কানের ভিতর আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেয় এবং আমাদের কথা শুনতে না চায় তখন একজন মানুষের সম্মানে কতটা আঘাত হানতে তা কি ভাবা যায় । তিনি আরো বলেন তারা তাদের কাপড় দিয়ে শরীর ঢেকে ফেলত যাতে নূহ (আঃ) এর কথা না শুনতে হয়।
সমাজের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিটি আপনার দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াচ্ছে যেন আপনি কেয়ামতের দিবসে বেঁচে যান যেন আপনি আল্লাহর ক্ষমা লাভ করতে পারেন যেন আপনি হেদায়েত পেয়ে যান আর আপনি তাকে দেখার সাথে সাথেই বাঁধছেন ওইযে নুহ আসছে মুখে কাপড় পেচিয়ে ফেলি যেন সে এসে আমাদের সাথে কথা না বলতে পারে ।
তিনি আরো বলেন তারা দিন দিন অহংকার করতে লাগল । এরপর আমি তাদেরকে জনসম্মুক্ষে ডাকলাম । এবং তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে ডাকলাম গোপনীয়তার সাথে ডাকলাম । অর্থাৎ নূহ (আঃ) বিভিন্ন ভাবে তার লোকদের জন্য সুযোগ করে দিয়েছেন ইসলাম গ্রহণ করার । তিনি জনসম্মুক্ষে আল্লাহর বাণী প্রচার করেছেন যেন কেউ পায় বাণী শোনাতে কে বিরত না হয়। আবার মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে আলাদাভাবে তাদের সাথে আলাপ করেছেন যেন কেউ যদি সবার সামনে ইসলাম গ্রহণ করতে দ্বিধাবোধ করে তাহলে যেন তারা গোপনে ইসলাম গ্রহণ করে। কিন্তু কোন লাভ হল না । তিনি তাদেরকে গভীরভাবে চিন্তা করতে উৎসাহিত করেন তিনি মানুষ তার সৃষ্টি নিয়ে ভাবতে উৎসাহিত করে বলেন।
“ তোমাদের কি হয়েছে যে তোমরা আল্লাহর প্রাপ্য মাহাত্ম্য প্রকাশ করো না। যখন তিনি তোমাদের ধাপে ধাপে সৃষ্টি করেছেন । “
আমরা যখন চিন্তা করি আমরা কোথা থেকে এসেছি কিভাবে একফোঁটা তুচ্ছ তরল থেকে আমরা আমরা পর্যায়ক্রমে সুন্দর ভাবে গঠিত একটি সৃষ্টিতে পরিনত হয়েছি । এসব কি আপনা আপনি হয়েছে এবং আমরা নিজেদের সৃষ্টির বিস্ময়কর প্রক্রিয়াটির দিকে তাকানোর পর যদি আমরা প্রকৃতির দিকে তাকাই তখন আমরা আরো স্তম্বিত হব।
নূহ (আঃ) বলেন তোমরা কি দেখনা আল্লাহ কিভাবে স্তরে স্তরে সাতটি আসমান সৃষ্টি করেছে। এবং সেখানে চাঁদকে আলো হিসেবে আর সূর্যকে প্রদীপ হিসেবে স্থাপন করেছেন।
আমরা যখন আকাশের দিকে তাকাই এর বিশালতার সামনে আমাদের ক্ষুদ্রতা আমাদের অন্তরকে কাঁপিয়ে তোলে তখন কি আল্লাহর মাহাত্ম্যের কথা অস্বীকার করার কোন সুযোগ থাকে। অথচ নূহ (আঃ) এর এমন চিন্তার খোরাক যোগানোর কথার উত্তরে মানুষ তাদের কানে আঙ্গুল দিয়ে রাখত কাপড় দিয়ে নিজের চেহারা লুকিয়ে রাখত নেতারা জনসাধারণকে বলে বেড়াতো তোমরা কোন অবস্থাতেই তোমাদের এই দেব-দেবীর পূজা করা বন্ধ করবে না। আল্লাহ নূহ (আঃ) কে লম্বা হায়াত দেওয়ার ফলে তিনি দেখলেন একের পর এক প্রজন্ম যেন আগের চেয়ে বেশি অন্যায়ের পথে চলেছে আল্লাহর বাণীকে প্রত্যাখ্যান করে চলেছে। আমাদের বুঝতে হবে নূহ (আঃ) কে আল্লাহ এমন এক জাতির কাছে পাঠিয়েছেন যারা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতি।
আল্লাহ সূরা নাজিমে আদ এবং সামুদ সম্প্রদায় কে বর্ণনা করে বলেন তাদের পাপের কারণে আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেন। এরপর নূহ (আঃ) এর জাতি সম্পর্কে বলেন “ নুহু এর জাতি ছিল তাদের চেয়েও প্রাচীন অর্থাৎ আদ এবং সামুদ সম্প্রদায়ের চেয়েও প্রাচীন। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহই নেই যে তারা অবশ্যই জালেম ও চরম অবাধ্য প্রকৃতির মানুষ ছিল । এখানে আরবি ভাষার দিকে তাকালে আমরা অবশ্যই দেখবো যে তাদেরকে প্রকাশ করার জন্য আল্লাহ তিনবার জোর দিয়েছেন। আমরা জালেমদের আচরণ 10-15 বছর সহ্য করতে গেলেই মনে হয় আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসছে। মনে হয় কবে কেয়ামত আসবে আসলে আল্লাহ এদের বিচার করবেন অথচ চিন্তা করুন আমাদের থেকে অনেক নিকৃষ্ট নেতাদের কাছে মানুষদের কাছে নূহ (আঃ) আল্লাহর পথে মানুষদের আহ্বান করে গেছেন। সাড়ে 900 বছর এবং বিস্ময়কর বিষয় হল এমনই একটি হতভাগা জাতির কাছে নূহ (আঃ) এর বার্তা গিয়েছিল ।
তিনি বলেন তোমরা যদি আল্লাহর পথে আসো এবং আমাকে অনুসরণ করো। তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও তিনি নিশ্চয়ই ক্ষমাশীল সুবহানাল্লাহ এমন জালেম সমাজকেও তিনি বলছেন আল্লাহর ক্ষমা থেকে হতাশ না হতে। এবং শুধু ক্ষমা নয় তারা ফিরে এলে আল্লাহর তরফ থেকে তাদের জন্য বিরাট পুরষ্কার অপেক্ষা করছিল। আল্লাহ আসমান থেকে তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন বৃষ্টি মানেই আল্লাহর রহমত বৃষ্টি মানেই বেশি বেশি ফসল ফল-ফলাদি ইত্যাদি । অবশেষে তারা নওয়ালা ইসলামের এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করায় এই বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ তাদের ধ্বংস করলেন। সুবহানাল্লাহ
তার পরিকল্পনাকারীর উপর আর কোন পরিকল্পনাকারীকে হতে পারে। দীর্ঘ সাড়ে 900 বছর দাওয়াত দেওয়ার শেষ প্রান্তে এসে নূহ (আঃ) কে আল্লাহ তা’আলা বলেন তার পর্ব শেষ।
তিনি তাকে একটি জাহাজ নির্মাণ করার আদেশ করলেন এবং আরো বললেন তার ডাকে তখনো পর্যন্ত যারা সাড়া দেয়নি তাদের ব্যাপারে যেন নূহ (আঃ) আর সুপারিশ না করে। কারণ তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। এটা নূহ (আঃ) এর জন্য অত্যন্ত কঠিন একটা পরিস্থিতি ছিল। তার চার সন্তানের মধ্যে একজন তার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সেইসাথে নূহ (আঃ) এর স্ত্রী ও তার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবুও আল্লাহর আদেশ নূহ (আঃ) জাহাজ নির্মাণ করতে লাগলেন। সমাজের মানুষরা ভাবল নূহ (আঃ) দিনের কথা ছেড়ে দিয়ে এখন নতুন পেশায় যুক্ত হয়েছে।তারা তাকে নিয়ে উপহাস করতে লাগলো । তিনি সাগর পার থেকে অনেক দূরে নৌকা তৈরি করতে লাগলেন । তারা তাকে বলতে লাগল আর নূহ নৌকা বানানো শুরু করেছো অত্যন্ত সাগরের কাছাকাছি গিয়ে নৌকা বানাও। না হলে এতদূর পর্যন্ত নৌকা টেনে নিয়ে যাবে কিভাবে।নূহ (আঃ) তার কাজ করে গেলেন এবং তাদের বললেন তোমরা আমাদের কাজ নিয়ে হাসাহাসি করছ একটা দিন আসবে যখন আমরা তোমাদের নিয়ে উপহাস করব ।
অবশেষে আল্লাহর হুকুম প্রতিপালিত হল বৃষ্টি আরম্ভ হল। বৃষ্টি দেখে হয়তো সেই মানুষেরা খুশি হয়েছিল কিন্তু বৃষ্টি যখন একবার আরামবাগ শুরু হল তারার থামার কোনো চিহ্ন নেই। আল্লাহর হুকুম মতে নূহ (আঃ) বিশ্বাস ঈদের নিয়ে এবং জোড়ায় জোড়ায় বিভিন্ন পশুপাখি নিয়ে নৌকায় উঠলেন । ওঠার আগে তিনি শেষবারের মতো চেষ্টা করলেন তার সন্তানকে ফিরিয়ে আনার। কিন্তু সে এতটাই জেদি আর এতটাই অভদ্র ছিল তার বাবা এতদিন ধরে নৌকা নির্মাণ করেছিলেন এটা দেখার পরেও এবং এরকম ভয়াবহ বন্যা আরম্ভ হওয়ার পরেও সে তার বাবার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করল এবং বলল সে পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে আশ্রয় নেবে তবুও সে তার সাথে যাবে না । অতঃপর বন্যা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছালো যে গোটা পাহাড় পর্বত সমূহ পানিতে ডুবে গেল। এবং সেইসাথে পৃথিবীতে যত অবিশ্বাসী ছিল তারা সবাই ধ্বংস হয়ে গেল।
অবশেষে আল্লাহ হুকুম দিলেন মাটি যেন তার পানিকে শুষে নেয় এবং আসমান যেন তার বৃষ্টিকে থামিয়ে দেয়। অপর্ণ আলাই সালাম এর নৌকা যুতি পাহাড়ের সামনে গিয়ে থামে । আল্লাহু নূহ (আঃ) কে বলেন ইয়া নূহ আমার নিরাপত্তা ও অবতরণ করো এবং আমার রহমত তোমার ও তোমার উম্মতের উপর । এমন এক সময় আসবে যখন তাদের জীবন আমি তাদের কিছুটা সময় উপভোগ করতে দিব এবং তারপর আমাদের কাছ থেকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে স্পর্শ করবে। কিছু উলামাদের মতে নূহ (আঃ) এর পুত্র সাম এর বংশধরদের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেন জাতির পিতা ইব্রাহিম (আঃ) ।